
ডিভোর্স এর পর বাড়ির লোক তুলিকে পাত্রস্থ করার জন্য একেবারে উঠে পড়ে লাগলো, পঁচিশর্ধ তুলির জন্য সম্বন্ধ এলো বছর তিরিশের শুভ্রর। শুভ্রর স্ত্রী সন্তান জন্ম দিয়েই মরা যান। সম্পর্কটি এলো তুলির মেজো মাসির হাত ধরে। মেজো মাসি ব্যারাকপুর হিন্দুস্থান এয়ার লাইন এ চাকুরীরতা, আর শুভ্র সেই অফিসেরি উচ্চ পদস্থ কর্মচারী। স্ত্রী বিয়োগে, সদ্যজাত সন্তানটির মা এর খুব প্রয়োজন, আর প্রয়োজন মেটাতেই দ্বিতীয় বিবাহের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত।
পিতৃদায়গ্রস্ত বাবা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত এর বিভীষিখা তুলি কে আর একবার ভাববার সুযোগ দেয়নি। ভীষণ ছিমছাম, আড়ম্বর হীন, বিবাহ নামক সরকারি কাজটি সম্পন্ন হলে তুলির বাড়ির লোক এক রকম হাফ ছেড়ে বাঁচে। আর ওদিকে শুভ্রর পরিবারের লোক ও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। শুরু হয় নতুন করে পথ চলা, যে খানে অন্য কারোর সাজানো সংসারে আজ সে নিতান্তই ভীষণ প্রয়োজনীয় আগন্তুক। মনে ভাবে , না জানি কত স্বপ্ন নিয়ে, কত আশার জাল বুনে, নিজে হাতে সংসার সাজিয়ে ছিলেন শুভ্র বাবুর স্ত্রী।

আর আজ ভাগ্যের ফেরে তার সংসারের চাবি তুলির আঁচলের কোনে বাঁধা পরবে। প্রথম সম্পর্কের জোট ছাড়তে না ছাড়তেই নতুন সম্পর্ক, কিছুটা ভয়, অস্সন্তী নিয়েই তুলি পা দিলো নতুন বাড়ি তে। বধূ বরণ করে ঘরে এনেই, তার কোলে দেওয়া হলো ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু টিকে। দু হাত দিয়ে সে তুলির কানের পাশের ঝুলে থাকা চুল গুলি নিয়ে খেলতে লাগলো, চোখ ফেটে জল এলো তুলির। এ যে স্বর্গ। ঠিক কাল অব্দি যে ছিল নিঃস্ব, একা, আজ তার স্বামী পুত্র নিয়ে ভরা সংসার। মাতৃ বাৎসল্যে বুকের সাথে মিশিয়ে অঝোরে কাঁদলো কিছুক্ষন, চোখ মুছলেন শুভ্র বাবুও। ভগবানের শ্রেষ্ট সৃষ্টি সন্তান, কেবল সেই পারে একজন নারী কে সম্পূর্ণ করতে।
— সুপর্ণা ঘোষ (০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)