Fri. Jun 9th, 2023

ঠাম্মা, বাপী, মা কে নিয়ে গোগোর ছোট্ট পরিবার। ভীষণ মিষ্টি, শান্ত স্বভাবের মেয়ে গোগো, ক্লাস 2 এ পরে। সকাল থেকে গোগোর রুটিনটা কিছুটা এরকম- ঘুম ভাঙে তার বাপীর বুকের উপর, রাতে ঠাম্মির কাছে ঘুমালেও কি করে যে ম্যাজিকের মতো বাপীর কাছে চলে আসে, বুঝতে পারেনা ছোট্ট গোগো। তারপর জলদি জলদি ব্রাশ করে, ঐ বিস্বাদ দুধে বিস্কুট ডুবিয়ে, নাক বন্ধ করে এক ঢোকে তা খেয়ে, বড্ড ভারী ব্যাগ কাঁধে বাপীর সাথে স্কুলে যায়। মা এর সাথে গোগোর সে ভাবে সময় কাটানো হয়না। ওর ঘুম ভাঙার আগের মা স্কুলের জন্য বেরিয়ে যায়। এতে ওর বড্ড আপত্তি।কেন মা ওকে ঘুম থেকে তুলে টাটা করে যায়না!! অভিমানে মুখ ভার করে থাকে। গোগোর মাঝে মাঝে বড্ড একা লাগে, সমস্ত আবদারের ঝুলি নিয়ে যায় ঠাম্মির কাছে। খেলার সাথী, আবদার, মান-অভিমান সবটাই ঠাম্মা সামলায়।

স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে, একটা গোটা মাস, গরমের ছুটি মানেই মা বাড়িতে থাকবে। উফফ, কি মজা, মা এর সাথে কাটানোর এই সময় গুলো গোগোর যে কি ভালো লাগে। সমস্ত রুটিন ভেঙে, এ কটা দিন মা কেও একবারো চোখের আড়াল হতে দেয়না। জমে থাকা সমস্ত গল্প, রাগ অভিমান সব মিটিয়ে নেয়।

সকালে পড়ার ঘরে চৌকির উপর মা বসে, পাশে গোগো, পা দুটো দেওয়ালে তুলে শরীরটা মায়ের কোলে। ইতিহাসটা ঠিক ভাল্লাগেনা গোগোর, মা রিডিং পরে ওকে গল্পের মতো বলে, ওর বেশ লাগে। বাপীর সাথে দুস্টুমি, ঠাম্মার কালা জোরে গল্প, ভোলা নামের ভুতের গল্প, নয় বছর বয়সে বিয়ে গল্প শুনতে শুনতে বেশ জমে উঠেছিল গ্রীষ্মের দুপুর গুলো,সাথে মা তো ছিলই উপরি প্রাপ্তি।

হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে মা ঘরে নেই। কান্না জুড়ে এ ঘর ও ঘর ঘুরে ঠাম্মির কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো,’মা কৈ ঠাম্মি? মা আবার আমাই না বলে স্কুলে চলে গেছে?’
ঠাম্মি গোগোর অগোছালো এলোমেলো চুল গুলো পটু হাতে গুছিয়ে দিয়ে, কোলে তুলে গালে একটা চুমু দিয়ে বললো-‘মা গেছে গোগোল সোনার জন্য ছোট্ট একটা বন্ধু আনতে,একটা ছোট্ট ভাই কিংবা বোন। কোনটা চাই তোর বলতো গোগোল?’
চোখ চক চক করে উঠলো গোগোর। বুনু? মানে আমার বুনু? মানে ঐ সুদীপ্তার যেমন ছোট্ট একটা ভাই আছে অমন ভাই? কিংবা বুনু?

খুশিতে নেচে উঠলো, গোল গোল করে গোটা বাড়ি দৌড়ে, নাচানাচি করে, উফফ! সে কি আনন্দ, আটকাতে পারছেনা নিজেকে।
ছুট্টে ঠাকুর ঘরে গিয়ে, অপটু হাত দুটো নমস্কার করে এক রাস আনন্দ আর এক গাল হাসি নিয়ে ঠাকুর কে বলল-‘ঠাকুর আমাকে একটা বুনু দিয়ো। আমি ওর চুল বাঁধবো, সাজুগুজু করাবো, স্কুল এ নিয়ে যাবো, কত্ত খেলবো, প্লিজ প্লিজ। না না ভাই দিও, না বুনু,..’। ঠিক করতে পারছেনা কি বলবে। তারপর কত ছবি আঁকলো, কত স্বপ্ন দেখলো সেই বুনু কিংবা ভাই এর জন্য।
কিছুদিন পর মা গোগোর সেই বহু আকাঙ্খিত বুনু নামক খেলনা টি নিয়ে বাড়ি এলো। গোগো হাত পা ধুয়ে, পরিপাটি করে বসেছে, আসন করে। কোলে নেবে যে বুনু কে। মা বুনু কে ওর কোলে দিলো। পৃথিবীর সব আনন্দ যেন ওর ছোট্ট কোলটা জুড়ে, ওর হাত আর কানের পাশের চুলটা মুঠোতে ভোরে শুন্যে পা ছুড়ছে।

গোগো তার নতুন পুতুলটার কপালে চুমু দিয়ে বললো- ‘বুনু তুই আমার ছোট্ট বুনু, আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি”।
এক টুকরো ঐ খেলনাটা হঠাৎ করে গোগো কে বড় দিদিভাই বানিয়ে, নিজে ছোট্ট বুনু হয়ে গেলো।
কে বলেছে মা এর জায়গা কেউ নিতে পারেনা? ভগবান মা এর পরে ঠিক মা এরই মতন আর একজন কে পাঠায় আমাদের জন্য। সে হলো দিদিভাই।।

— সুপর্ণা ঘোষ (০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)

By Suparna Ghosh Kunda

নিজের কথা লিখতে গেলে গুলিয়ে যায়, বলতে জিভ জড়িয়ে যায়। তবুও নিজের কথা বলতে কার না ভালোলাগে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *