(পর্ব ১)
অফিস আসার পথে ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে হটাত চোখ আটকে গেলো কৃষ্ণচুড়া গাছ টায়। না ঠিক গাছ না, আসলে একটা ছবি। প্রিয় আল্পনা দি, শেয়ার করেছেন আমার ছেলে বেলার ফেলে আসা স্মৃতি মেদুর কিছু জায়গা। আমার স্কুল। আল্পনা দি হলেন আমাদের দশম শ্রেণির অঙ্কের দিদিমনি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি, আজ এত গুলো বছর পর পেছন ফিরে দেখলে যে অনুভুতি হয়, তা প্রকাশের ভাষা পাওয়া শক্ত। কেউ যদি প্রশ্ন করে তোমার জীবনে আর একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ এলে, তুমি কোথায় যেতে চাইবে! আমার উত্তর হবে ফেলে আসা স্কুলের দিন গুলোয়। লেখাপড়া ও তারপর কর্ম সুত্রে কলকাতায় থাকলেও, এমন একটা দিন নেই যেদিন নিজের শহরটাকে মিস করিনা। সেই শহরে মিসে আছে আমার শৈশব, কৈশর, বেড়ে ওঠার প্রতিটা গল্প। আজ বলবো আমার স্কুলের কথা।
চতুর্থ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো হাই-স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা(Admission Test)। ফর্ম তোলা হল চারটি বালিকা বিদ্যালইয়ের। নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ হল। চারটি স্কুলেই প্রথম লিস্ট এ নাম এলেও, যে স্কুলে সব থেকে পেছনে অর্থাৎ যে স্কুলের ফল সব থেকে খারাপ হল, বাবা মা ঠিক করলেন আমি ওই স্কুলেই যাব। এর পেছনে অবশ্য তাদের খানিকটা স্বার্থ ছিল। আমি স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম। সাদা জামা, খয়েরি ফ্রক, চুলে লাল ফিতে, পায়ে সাদা জুতো ও মোজা, পিঠে নতুন ব্যাগ, গলায় জলের বোতল। আমার স্কুলের নাম মাহারাণী কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরের ঠিক মধ্য ভাগে জল-ট্যাঙ্ক বা গির্জার মোড়, কে এন রোডে স্কুলটি অবস্থিত ( Panitanki, KN Rd, Berhampore, West Bengal 742101)।
প্রথম দিন বাবা সাইকেলের সামনের ছোট্ট সিটে বসিয়ে নিয়ে গেলেন। অচেনা, অজানা একটা নতুন পৃথিবীতে ধুকতেই চোখে পড়লো সেই কৃষ্ণচুড়া গাছটি। স্কুলে ঢুকতেই বাম দিকে ছিল এই গাছটি, আর তার গা ঘেসে আমাদের সাইকেল বারান্দা। সাড়ি সাড়ি করে মেয়েরা সাইকেল সাজিয়ে রেখে নিসচিন্তে ক্লাসে যেত। স্কুলের মেন গেট এর আকদম মুখমুখি, দর্প ভঙ্গীতে সিংহাসনে বসে রয়েছেন মহারাজা মনিন্দ্র-চন্দের পত্নী, মহারানী কাশীশ্বরী । আর তাঁকে ঘিরে রয়েছে অত্যন্ত যত্নে বেড়ে ওঠা রঙবেরঙ এর ফুল, পাতা বাহারের গাছ। গোল বাগান পার করেই শুরু গাড়ি বারান্দা। তারপর সারি সারি ক্লাস রুম। ক্লাস রুম পেরিয়ে পেছনে গেলে মিলবে এতিহাসিক মহলের আদলে তৈরি প্রকাণ্ড কারুকার্য ও থাম যুক্ত অফিস, স্টাফ, ও টিচার্স রুম। তার পেছনে কল ঘর। বাম দিকে লাল বারান্দা। যেখানে প্রত্যাহ সকালে সারি সারি লাইনে দাঁড়িয়ে পার্থনা করেছি। লাল বারান্দা শেষ করে শুরু হয় প্রাইমারী স্কুল, আর তারপর দিগন্ত বিস্তৃত খেলার মাঠ।
মাঠ শেষে ঠিক কোনের ডান দিকে একটি দোতলা বাড়ি। পরিচর্যার অভাবে জরাজীর্ণ, রুগ্ন। নিচের একটি লম্বা রুমে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর দিদিরা লাল পার সাদা শারি পরে ক্লাস করতো, কিন্তু কখনো কাউকে উপর তলায় উঠতে দেখিনি। এই উপর তলার প্রতি একটা রহস্যময় আকর্ষণ ছিল।