Fri. Jun 9th, 2023


‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ কথাটি কি কতদূর সত্যি বা মিথ্যে তার তর্কে না গিয়েই বলছি, সকাল সকাল এক চোখ, এক শালিক, ঘর থেকে বেরোনোর আগে হাচ্ছি, বা বেড়ালে রাস্তা কাটা, হেঁচকি এসমস্তে আমার কোনো কালেই কিছু আসে যায় না। তবে ওই ধোয়া তুলসী পাতাটি হয়ে উঠতে পারিনি তাই কুসংস্কার বলতে হাতে গুনে দু তিনটে আমারও আছে। এই যেমন ডান চোখ লাফানো বা বিপদে পড়লে হাতের কাছে যে দেবতা কে পায় তাকে ৫১ /১০১ এর পুজো দেব বলে পরিত্রানের একটা পাকা-পোক্ত ব্যবস্থা করে রাখি।এরকমই একটা বিপদের দিনে হুট করে মনে মনে বলেফেলেছিলাম ‘মা গো এযাত্রা রক্ষে করো, আমি না খেয়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে আসবো। ‘ কিকরে জানিনা মা শুনে ফেলেছিলেন এবং কথা মতো রক্ষে ও করেছেন তাই এবার আমার কথা রাখার পালা।

কলকাতায় শীতটা একটু বেশিই পড়েছে, তবুও মনকে শক্ত করে আজ চলেই গেলাম।এলার্ম ছিল ৭.১৫ মিনিটের কিন্তু কিকরে জানিনা ৬.৪৫মিনিটে এলার্ম বাজলো। এমনিতে অফিসের কল্যানে আজকাল ভোরে উঠতে বাধ্য হয়।ওই টাইম ৬.৪৫এ থাকে আমার শেষ এলার্ম টি। ঘুম ভাঙতে ভারী অবাক হলাম, কারণ কাল এলার্ম দিয়েশুুয়েছি একটি এবং সেটি ৭.১৫ তে বাজার কথা কিন্তু ৫মিনিট অন্তর অন্তর বেজে চলেছে প্রায়  ৬.৩০ থেকে। যাইহোক লক্ষ করলাম মনটা বেশ ফুরফুর করছে। ঠিক করলাম ওলা কিংবা উবেড় বুক করে চলে যাব। কিন্তু আমার সে গুড়ে বালি,আমার ঘর থেকে মন্দিরের দূরত্ব ২.৭কিমি আর ভাড়া বলছে ২৫০টাকা।চোখ বন্ধ করে ঠিক করলাম আমি বাসেই যাব।গরম জলে স্নান করে ধোয়া জামা কাপড় পরে বাড়ি থেকে যখন বেরোলাম তখন ঘড়িতে ৭.৫৫বাজে। আমার ঘর থেকে প্রথমে টোটো গাড়ি চড়ে যেতে হবে বেলঘড়িয়া ওভারব্রিজ,সেখান থেকে বাস বা ছোট গাড়ি(আমার বাবার ভাষায় ম্যাজিক গাড়ি) এবং তারপর একটি অটো। আগে কখনো একা যায়নি তাই টোটো গাড়ির সহযাত্রী থেকে জেনে নিলাম কোন বাস যায় বা গাড়ি কোথাথেকে পাব। সহৃদয় ভদ্রমহিলা একরকম আমার হাত ধরে বাস এ তুলে দিলেন এবং কন্ডাক্টরকে বলে দিলেন, তিনি যেন আমাকে ডানলপে ঠিক মত পৌছেদেন। সকালে আমি প্রত্যেকদিন বেরোয়। কাজে বেরোয়, কখনো ঘুরতে বেরোয়নি, তাই আজ সকালটা বেশ অন্যরকম। আকাশ মেঘলা, টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে, শীতের সকালে আরিমুড়ি ভেঙে কলকাতা সবে চোখ খুলে বিছানার উপর গুটিসুটি মেরে বসে আছে। ধোঁয়া ওঠা চায়ের দোকানে দোকানি চা এর পাত্র নামিয়ে সবে মাত্র জলখাবারের জোগাড় করতে আরম্ভ করেছে।ফুলের দোকানি দোকান সাজাচ্ছে। ব্যস্ততার সকালের সাথে এর অনেক পার্থক্য। শহরের এমন রূপ কখনো কোন ব্যস্ত সকালে আমি দেখিনি। ৮টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেলাম ডানলপ, এবার এখন থেকে অটো। অটো থামলো নব নির্মিত স্কাই ওয়ে এর দোরগোড়ায়। ফোন বের করে নানা পোজে নিজের ও স্কাই ওয়ের বেশ কয়েকটি ছবি নিলাম এবং রওনা দিলাম গন্তব্যের দিকে।

হাটতে হাটতে মনে পড়লো, আগে যখন এসেছি তখন এই পথ টুকু রিক্সা কিংবা টোটো গাড়িতে গেছি। সামান্য পথ কিন্তু রিক্সা ভাড়া ছিল প্রায় ২৫টাকা, অর্থাৎ স্কাই ওয়ে ওদের পেটের ভাত কড়েছে। ভারী সুন্দর পরিপাটি রাস্তা, দূর থেকে মন্দিরের চূড়াটি দেখা যায়, রিমঝিম বৃষ্টি, ঠান্ডা হওয়া সাথে মান্না দের কণ্ঠে ভেসে আসছে শ্যামা সংগীত। স্কাই ওয়ের বাহির পথ অতিক্রম করে দেখি দাঁড়িয়ে আছি মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে। সেখানে জুতো, ব্যাগ ও সেলফোন রাখার সারি সারি ঘর। ব্যাগের ভেতর সেলফোনটি রেখে ও মানিব্যাগ টি বের করে দিয়ে দিলাম সেখানে থাকা ভদ্রলোক টিকে। উনি একটি টোকেন দিলেন এবং জানালেন ফেরার সময় টোকেন দেখিয়ে ১৩টাকা দিয়ে নিজের ব্যাগটি নিতে হবে।ঠিক একই ভাবে পাশের কাউন্টারে জুতো জোড়া রেখে টোকেন নিয়ে পকেটস্থ করলাম।

এবার নিতে হবে পুজোর ফুল মিষ্টি ও ধুপ বাতি। প্রধান মন্দিরের ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে দোকান ঘরের সারি। সেদিকে হাঁটা শুরু করতেই সকলে মিলে দিদি দিদি দিদি করে এমন হট্ট গোল জুড়ে দিলো যে আমি ঠিক করতে পারছিনা কোনটায় যাব। এমনসময় মনেমনে হিসেব করে দেখলাম পুজোর ফুল তাই ডান হাতে নিতে হয় তাই আমি ডান দিকে যাব এবং সেইমত ডান দিকের প্রথম দোকান টিতে ঢুকে গেলাম।
এবার মন্দিরে ঢোকার পালা। একে বেশ সকাল ও বৃষ্টি তার উপর সোম বার তাই লোকজন বেশ কম। টুক করে পুজো দেওয়া হয় গেল। ঠাকুর দর্শনের সময় পেলাম ৬ থেকে ৭ সেকেন্ড। মন্দির থেকে নেমে এসে উঠে এলাম নাট-মন্দিরে ।আমার বাবা মাঝে মাঝেই আসেন এখানে এবং এই নাটমন্দির টা তার ভীষণ পছন্দের। বাবার কথা মত এখান থেকে মায়ের মুখ একদম সোজাসুজি স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।  উঠে গিয়ে দেখি ঠিক তাই। প্রণাম করে পেছন ফিরে বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম এক ভদ্রমহিলা দুটি কুকুরের প্রেমালাপ সহ্য করতে না পেরে তাদের গালাগালি করছেন এবং মাকে ডেকে ডেকে দেখতে বলছেন এই অনাচারের দৃশ্য।


সকাল থেকে না খেয়ে তাই খিদেও পেয়ে গেছে, বেরোনোর রাস্তার ঠিক বাম দিকে রয়েছে খাবারের দোকান । এগিয়ে যেতেই সেই একই ডাক,  দিদি দিদি দিদি। আমি চোখ বন্ধ করে বাবার একটি উপদেশ মনে করলাম। যে দোকানে ভিড় বেশি , সেখান থেকে খেও। ব্যস ভিরভাট্টাওলা দোকানটি বেছে নিয়ে বসে পড়লাম একটি টেবিলে। ৫টি পুরী, ছোলার ডাল খাচ্ছি ,পাশের ভদ্রলোক দোকানের ছেলেটিকে ডেকে বললেন একটি রসগোল্লা দেন। ছেলেটি ওনাকে দিলেন এবং সাথে সাথে আমাকেও দিতে চাইলেন। আমি মিষ্টি পছন্দ করিনা, কিন্তু ছেলেটির যুক্তি অনুযায়ী মায়ের ঘরের মিষ্টিকে না করতে নেই তাই আমিও নিলাম, আর সাথে এক ভার চা। বিলের ৪০টাকা মিটিয়ে এবার ঘরে ফেরার পালা।

মন্দির থেকে বেরিয়েই উঠলাম স্কাই ওয়ে তে। তারপর নেমেই উঠে গেলাম বাস এ। রথতলা নেমে মনে পড়লো আমার দুপুরে রান্নার জন্য বাজার করা দরকার। বেলঘড়িয়া বাজার থেকে মাংস কিনে ঘরে ফিরলাম। আমি ভীষণ ভুলে যায়। তাই ফিরেই লিখে রাখলাম আজকের অভিজ্ঞতা। এবার যাব মাংস রান্না করতে সাথে গরম ভাত।যারা ভাবছেন মায়ের পুজো দিয়ে নিরামিষ খেতে হয় তাদের বলে রাখি আমি এই সংস্কার টাও মানিনা।

By Suparna Ghosh Kunda

নিজের কথা লিখতে গেলে গুলিয়ে যায়, বলতে জিভ জড়িয়ে যায়। তবুও নিজের কথা বলতে কার না ভালোলাগে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *