বিট বৃত্তান্ত

মা মাঝে মাঝে আমাকে আচমকা ভিডিও কল করে বসে। সেদিন হটাৎ করে বাড়ি ফিরছি, এক বাস হুড়হুড়ির মধ্যে মার ভিডিও কল। মার কল যে কেটে দেব, সে সাহস মানে আমার ঘাড়ে একটাই মাথা, যেটা কেটে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করলাম। ঘটনা চক্রে আমার ফোনে বত্রিশ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা , তাই তুমি যতই কালো হও, যতই অন্ধকারে থাকোনা কেন, ছবি এবং ভিডিও তে তুমি দীপিকা পাডুকোন। লোকের গুতাগুতি ও দু চারটে ভালোমন্দ শুনতে শুনতে যখন ফোনের স্ক্রিনে আমার মুখ জ্বলজ্বল করে উঠেছে, ওমা মা একদম স্টেজে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা গোছের শুরু করলো। সোয়েটার কেন পড়িনি, কানে হওয়া ঢুকছে, ঠান্ডা লেগে যাবে, সকালে, দুপুরে , বিকেলে কি খেলি, পড়াশোনা ইত্যাদি ইত্যাদি শেষ করে হটাৎ মা আবিষ্কার করলো আমি কেমন যেন অপ্রয়োজনীয় রকম সাদা হয়ে গেছি। যেইনা ভাবনা ওমনি মা দস্তুর মত চিন্তা শুরু করলো আমার রক্তাল্পতা নিয়ে।

অতিরিক্ত সাদা দেখায় মার মনে ভীষণ ধারণা জন্মালো যে আমি একদম সব্জি খাচ্ছিনা, আর তাই রক্ত শুন্য হয়ে আমি সাদা হয়ে গেছি। আমার রক্তের group বি নেগেটিভ, তাই ছোট থেকেই দেখেছি মা এই ব্যাপারটা নিয়ে জোমিয়ে চিন্তাভাবনা করতে ভালোবাসে। আমার মনে হয় সন্তান দের নিয়ে দুশ্চিন্তা করা মা দের একটা শখ বা aim এর মধ্যে পরে। যাইহোক, শুরু হল রক্ত শূন্য হলে কি কি হতে পারে, এবং আমার রক্ত ফুরিয়ে গেলে তা নতুন কারোর থেকে নেওয়ার ব্যাপারটা যে খুব অসুবিধে জনক সে ব্যাপারে সাবধান করতে শুরু করলেন। সাথে আরও জানালেন, কোন কোন ফল ও সব্জি আমাকে এই ভীষণ রোগ থেকে মুক্তি দেবে তার চার্ট বানিয়ে দেবেন । এবং তাতেও উনি ক্ষান্ত হলেননা। রীতিমত দিব্যি নামক বস্তুটি জোর করে খাইয়ে দিলেন যাতে কাল থেকে আমি মার বলা সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বাধ্য থাকি। বাড়ি ফেরার সময় বিট গাজর এনেছিলাম, মায়ের দেওয়া লিস্ট এ এটা ছিল, বিট খেলে নাকি অনেক রক্ত হয়। খাবার সময় ছবি তুলেছিলাম। মা কে প্রমান দিতে হয় তো!
আমার এখনো মার দিব্যি কে ভয় পেতে ভালোলাগে। মা কেও ??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *