Fri. Jun 9th, 2023

৯.৩০টাই ব্যারাকপুর লোকালটা মিস হলেই ব্যেস, বসে থাকতে হয় সেই ৯.৫৭এর নৈহাটি লোকাল এর জন্য। ঠাণ্ডাটা বেশ জমিয়ে পড়েছে। লেপের ওম ছেড়ে কটকটে ঠাণ্ডা মেঝেতে পা ফেলতে হবে ভেবেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায় রাই এর। প্রতিদিন উঠতে দেরি, উঠে তাড়াহুড়ো, মুখে কিছু একটু গুজে, ঘাড়ে আপিসের ঝোলা, দে ছুট ‘রানার চলল রানার’ স্টাইলে।

তারপর কখনো অটো, কখনো টোটো, কখনো রিক্স। তারপর ট্রেন, ট্রেন থেকে নেমে এক ঝাঁক লোকের সাথে গুঁতো গুঁতি করে ঢুকতে হয় সাবওয়ে তে। শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। উল্টোডাঙ্গা স্টেশন থেকে অটো পাওয়া যেন ভগবানের দেখা পাওয়ার সমান।মিনিট দশ “দাদা যাবেন”, “দাদা যাবেন”, তারপর হঠাৎ কোন এক অটো চালক ঘচাং করে ব্রেক মেরে সামনে দাঁড়াবে। চলচিত্রের slow motion এ যেমন নায়িকার চুল গুলি উড়ে এসে চোখে মুখে খোঁচা মেরে যায়, ঠিক তেমনটাই হবে। আপনি আনন্দের সঙ্গে এক গাল হাসি দিয়ে বলবেন –‘দাদা কলেজ মোড় ?’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার (স্বপ্নের রাজকুমার) অটোওলা বলে বসলেন “২৫ টাকা দিদি”।

প্রতিদিন দিন ঠিক এটাই হয়, কিন্তু আজ হলো উল্টো। বছর ৬০ এর অটো চালক, বললেন আসুন। পেছনে ৩ জন অগত্যা সামনেই বসতে হলো। অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে নিজের ব্যাগকে বর্ম বানিয়ে এতটুকু সিটে নিজের এতো বড় শরীর ফিট করে বসে পড়লো সে।

রুগ্ন শরীর, সামান্য ফাটা একটা অত্যন্ত পুরনো সোয়েটার, মাথায় ঢিলে হয়ে যাওয়া খয়েরি রং এর হনুমান টুপি ভাজ করে উপরে তুলে পরা। অটোটিও বেশ রুগ্ন। পাশ দিয়ে বোঁ বোঁ করে ছুটে যাওয়া জোয়ান রঙ চঙে, টুনি লাগানো বা ‘ইয়ু আর মাই ছম্মকছাল্ল’ গান বাজা অটো গুলো যেন খিক করে হেসে ব্যাঙ্গ করে হিস হিস করে ছুটে চলেছে।

‘দাদা বাম দিকে নামবো’। নেমেই প্রতিদিন অভ্যাস মতো ২৫ টাকা বের করে দিলো রাই। দিয়েই হেঁটে এগিয়ে যেতে যাবে, পেছন থেকে কে যেন ডাকলো, “ও দিদিভাই টাকাটা নিয়ে যান”। রাই এর কানে হেডফোন, তাই প্রথমে শুনতে না পেলেও একটু পরেই শুনলো। অটো চালক ডাকছেন, ফিরে আসতেই একটা দশ টাকার নোট ও সাথে ৩ টাকা খুচরো হাতে দিলেন। অবাক হয়ে রাই জানতে চাইলো, ভাড়া তো ২৫ টাকা আপনি ফেরত দিলেন কেন? তিনি জানালেন, দিদিভাই ভাড়া ১২ টাকা, ওরা নেয় ২৫, ৩০ বা ৫০। আমি ন্যায্য ভাড়া নিই, তাই আজও অটো চালাচ্ছি। তারপর চলে গেলেন। রাই দাঁড়িয়ে থাকলো দু-তিন সেকেন্ড, ওর ঠোঁটের কনে একটা হাসি এসে মিলিয়ে গেল।

— সুপর্ণা ঘোষ (০৯ ডিসেম্বর ২০১৭)

By Suparna Ghosh Kunda

নিজের কথা লিখতে গেলে গুলিয়ে যায়, বলতে জিভ জড়িয়ে যায়। তবুও নিজের কথা বলতে কার না ভালোলাগে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *