এনাকে চেনেন অনেকে। রোজ সকালে উনি ব্যারাকপুর লোকাল এ লেডিস কোম্পার্টমেন্ট এ থাকেন। পেশায় হকার। তবে এনার এক অদ্ভুত মার্কেটিং স্ট্রাটেজি।
প্রদীপ বাবুর বয়স আন্দাজ সত্তর,অতিসাধারণ অথচ পরিষ্কার জামা কাপড়, কখনো বা সাদা ধপধপে পাজামা পাঞ্জাবি ও তার সাথে মেচ করে সাদা স্যান্ডেল, কাঁধে ব্যাগ, হাতে লাঠি । কাঁধের ব্যাগ এ আছে নানান ধরণের মুকসুদ্দি, জোয়ান, আমলকি, আদার বড়ি ইত্যাদি। ওনার উপস্থিতির সব থেকে আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য হলো ওনার “বিক্রির ধরণ”। প্রথম যেদিন এই ভদ্রলোক কে আমি দেখি সেদিন ব্যাপার টা আমার সম্পূর্ন চালাকি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। কিন্তু ওই যে কোনো এক বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে গেছেন “don’t judge a book by its cover” কথাটা নেহাত মিথ্যে নয়।
ভদ্রলোক একরকম দায়িত্ব নিয়ে ওই লেডিস কোম্পার্টমেন্ট এ প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে এই রিপিট, প্রত্যেকটি ব্যক্তির হাতে কখনো ভালোবেসে, কখনো ধমক দিয়ে, কখনো রাগ দেখিয়ে তাঁর ওই জোয়ান, আমলকি গুঁজে দিচ্ছেন। তার ব্যাগ থেকে একটার পর একটা প্যাকেট বের করে কাটছেন এবং বিলিয়ে দিচ্ছেন। দু-তিন জন তাদের প্রয়োজন মত কিনছেনো।
প্রথমটা আমার বেশ রাগ হত, দাদু কাণ্ডের পর ভালো খারাপ বিচারের বুদ্ধির পেছনে ধোঁয়া দিয়ে আলমারিতে তুলে রেখে এখন সকলকেই মোটামুটি সন্দেহের নজরে দেখি। তাই ওনাকেও প্রথমে গায়ে পড়া ভেবে ফেলেছিলাম অক্লেশে। তারপর দীর্ঘ দিন যাতায়াতের পথে একটু একটু করে আলাপ, পরিচিতির পর বুঝেছি ওনার এই ব্যবহারের পেছনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকতেই পারেনা। ট্রেনে উপস্থিত কাউকে কখনো ওনার বকা খেয়ে বা চেল্লামেল্লি শুনে রেগে যেতেও দেখিনি, বরং সকলে বেশ উৎসাহে ওনার উপস্থিতি উপভোগ করেচলেছে। কত সহজে প্রত্যহ নিরুত্তাপ নির্বিকার মানুষটা একই ভাবে সকলের মাঝে হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে সেটা যারা প্রত্যক্ষ করেছে কেবল তারা জানে।
আমাদের চলার পথে কিছু মানুষ থাকে যারা হুট করে মনে দাগ কেটে যায়, যাদের কথা কোনোরকম চেষ্টা না করেই বহুদিন বহু বছর মনে রাখা যায়, ঠিক তেমন একটা ব্যক্তিত্ব হলেন প্রদীপ বাবু। সত্যি বলতে আমার জীবনে দাদু বা ঠাকুরদা কাউকে আমি দেখিনি, দেখলে হয়তো প্রদীপ বাবুর সাথে কোনো পার্থক্য পেতামনা। হয়তো দাদু এরকমই হয়। প্রার্থনা করি আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর এভাবে দুর্দান্ত জীবন কাটান।