হঠাৎ প্লান কালীপূজোয় তিন দিন ছুটি, অভি আর সাথে তিন বন্ধু, গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু গ্যাংটক এর উদ্দেশ্যে। অভি বরাবরই ‘উঠলো বাই তো কটক যাই’।
নবমীর রাতের ছোট্ট একটি কারণে একরকম দুম করে উদিতার সাথে ব্রেকাপ। বুঝে ওঠার আগেই যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হলেন সুন্দরী। অভি একটি নামি MNC এর বিজনেস হেড। অফিসের চাপ সামলে প্রেম সামলানো যে কি জ্বালা, সে নিয়ে লিখতে বসলে গুছিয়ে একখান মহাকাব্য লিখে ফেলতে পারেন।
মনটা বেশ ভারী, তাই এই হটাৎ ভ্রমণ। রাত প্রায় পৌনে একটা যখন ওরা শিলিগুড়ি পেরিয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরলো, বাঁধ ভাঙা ঘুম যেন সব স্মৃতি গিলে ফেললো জল ছাড়ায়। পর দিন সকালে পৌঁছলো গন্তব্যে। লজটির নাম “হোটেল পেরামাউন্ট”। ছিমছাম কাঠের তক্তা পাতা ঘর, গরম জলের সুন্দর ব্যাবস্থা, পার্কিং লটের সামনে এক চিলতে একটি ঝর্ণা, আর সব থেকে আকর্ষণীয় হল ছাদটি। ছাদের গা ঘেষে নেমে গেছে পাহাড়ের খাদ। একটু অসতর্কতা আর মৃত্যু। ঠিক হলো সকালে একটু সাইড সিন ঘুরে রাতে লজ এর ছাদে খাওয়া দাওয়া আর পানীয়। সেইমতো সব আয়োজন, রান্না করার সুন্দর ব্যবস্থা তাই রান্না করেই খাওয়া হবে ঠিক হলো, সাথে সূরা।
তাসের আসর, গিটার এর ঝংকার,আর গানের আড্ডার মাঝে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো খাদের ধারের রেলিং এ। ছোট খাটো গরণের তেরো চোদ্দ বছরের একটি মেয়ে, মাঝ রাতে এত ঠান্ডায় ফিনফিনে একটা পোশাকে এত ছেলের মাঝে ওই কোন দাঁড়িয়ে কি করছে! কৌতূহলে চোখ কোচলে উঠে আসবে, এমন সময় – একি মেয়েটা রেলিং পেরিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে ছাদের গায়ের উঁচু সিমেন্ট বাঁধনে ধারে, এক পলকে লাফিয়ে পড়লো এবড়ো খেবড়ো ওই পাহাড়ের খাদে, কি ভীষণ চিৎকারে মিলিয়ে গেল এক নিমেষে। ঘটনার বিহ্বলতাই, বিস্ময়ে, ভয়ে চোখ দাঁড়িয়ে গড়ছে, হার কাঁপানো শীতেও কপালে ঘামের বিন্দু। বরুণ দৌড়ে নীচে গেল কেয়ারটেকার কে ডাকতে। থতমত খেয়ে অভি আর বন্ধুরা তখন যে যার জায়গায় থ- মেরে দাঁড়িয়ে। কেয়ার টেকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে ওদের দেখে খানিক্ষণ চুপ থেকে বলল, “বাবু,ভয় পাবেন না, আপনারা নতুন, তাই টুকু দিদিমণি আপনাদের দেখা দিতে এসেছিল, তিন বছর আগে এই ছাদের থেকে পরে যায় ওই খাদে, তারপর খোঁজ খবর কিন্তু বডি মেলেনি, এখনো নতুন কেউ এলেই এমন দেখতে পান”।
শুনে গলা শুকিয়ে, হৃৎপিন্ড জমে যাওয়ার জোগাড়। রাতে আর ঘুম হোলনা। ভুত চতুর্দকশি যে ভুত দর্শন হয়ে গেল।
— সুপর্ণা ঘোষ (২০ অক্টোবর ২০১৭)