উপহার

১২ই ডিসেম্বর, ঘোষ বাবুদের ২৫তম বিবাহবার্ষিকী, সুচিত্রা দেবীর সংসারের চাপ, মেয়ে দের লেখা পড়া, নিজের স্কুল সামলে নিজের জন্য এক বিন্দুও সময় থাকেনা। এতগুলো বছর ঠিক একি ভাবে নিজে হাতে সন্তান ও স্বামীর সেবা করে চলেছেন, কোনো রকম অভিযোগ ছাড়াই।

দীর্ঘ ছয় বছর প্রেম তার পর বিয়ে। বিয়ে করেছিলেন পরিবারের অমতেই। তখন সুচিত্রা দেবী চাকরি তে সবে জয়েন করেছেন, ঘোষ বাবুর ব্যাবসা।

পরিবারের অমত এখানেই, যে তারা চাকরি করা মেয়ের বিয়ে ব্যাবসিক ছেলের সাথে দিতে নারাজ। অনেক চেষ্টার পরও পরিবারের কাউকে রাজি করাতে না পেরে, অবশেষে ঘনিষ্ট কিছু বন্ধু বান্ধবের উপস্থিতিতে বিয়েটা তাঁরা মন্দিরেই সারলেন। প্রত্যেকটি মেয়েরই বিয়ে নিয়ে অদ্ভুত একটি স্বপ্ন থাকে, যা সুচিত্রা দেবীরও ছিল, কিন্তু ভাগ্যের ফেরে তা আক্ষেপই থেকে গেলো। ওনাদের প্রথম সন্তান এর পর সমস্ত সম্পর্ক গুলো ফের ঠিক হয়ে গেলেও মনের কোথায় যেন একটা খোঁচা থেকেই গেলো।

আজ ২৫টা বছর পর এসে পরিস্থিতি আর বয়সের চাপে এই দিনটার মাধুর্য ও ধীরে ধীরে কমে গেছে, অন্তত ঘোষ গিন্নি তাই মনে করেন।

ঘোষ বাবুর সকালের কাজ বলতে ঘুম থেকে ওঠা, কিছুক্ষন প্রাণায়াম, চা খেয়ে স্নান, তারপর পুজো। তারপর খেয়ে চলে যান দোকানে। ফেরেন দুপুরে, গিন্নি তখন থাকেন স্কুলে, মেয়েরা নিজেদের কাজে।

আজ ফিরলেন বেশ কিছু রজনী গন্ধা নিয়ে, সাথে গিন্নির প্রিয় মিষ্টি দই আর চমচম। বিয়ে যেহেতু নিজেরা করেছিলেন তাই বিয়েতে তেমন কিছু উপহার দেওয়া হয় ওঠেনি, তবে পরে পরে সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়েছেন হাসি মুখে। গান্নি কখন মুখ ফুটে কিছু চাননি, কিন্তু আজ ঘোষ বাবু উপহার এনেছেন, সযত্নে তুলে রাখলেন দেওয়াল আলমারির দ্বিতীয় থাকে।

বিকেল ৪টে স্কুল ছুটির পর যেতে হবে গোরাবাজার, সেখান থেকে নিতে হবে স্বামীর বিবাহ বার্ষিকীর উপহার। মানুষটার বয়স হয়েছে, চিন্তা হয়, মন ভারী হয়। না না আজ মন ভালো রাখার দিন।

বাড়ি ফিরে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকতেই সেই পাগল করে সুবাস। ভালোবাসা মাখানো উষ্ণ আহ্বান।

– কি গো আজ আর দোকান যাওনি!

— অপেক্ষা করছিলাম তোমার ফেরার।

– আজ হঠাৎ ফুল আনলে যে?

— তুমি কি সত্যিই ভুলে গেছো, আজ কের দিনটার কথা!

– তা কি কখন ভোলার! তাইবলে এই বয়সে আর সে সবের কি দরকার আছে!

— দাম দিলেই আছে, আজ তুমি আর রাতে রান্না কোরো না। আমরা বাইরে যাবো খেতে।

– না না এসব ছেলেমানুষী বাদ দাও, ছোটটার এমনিতেই দুদিন অন্তর পেটে ব্যথা। আমি ঘরেই রাধব।

— একটা দিন সবাই মিলে বাইরে যাবো , কথা শোনো।

– আচ্ছা শুনলাম।

— তোমার জন্য দই এনেছি, ফ্রিজ এ আছে, আর এই উপহারটা।

– ওমা তুমি কি করে জানলে আমার এটা দরকার ছিলো! বেল্টটা ছাড়া স্পন্ন্ডলাইসিস এর ব্যথাটা কমতো নাগো।

— তোমার প্রয়োজন আমি বুঝবো না! আচ্ছা আমার জন্য কিছু আনোনি?

– (হেসে) হ্ম্ম এই নাও, পরে দেখ, কেমন লাগছে। পুরোনো দাঁত টা অনেক দিন পরছো। তাই নতুন দাঁত বানিয়ে দিলাম। তোমার হাসি যে আমাকে বাঁচার প্রেরণা দেয়।

সম্পর্কের বয়স বাড়ে, বাড়ে তোমার আমার বয়স। তাই বলে কি প্রেম করতে নেই? ভালোবাসে ভালোরেখেই তো আমরা ভালোথাকি।

— সুপর্ণা ঘোষ (০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *