‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ কথাটি কি কতদূর সত্যি বা মিথ্যে তার তর্কে না গিয়েই বলছি, সকাল সকাল এক চোখ, এক শালিক, ঘর থেকে বেরোনোর আগে হাচ্ছি, বা বেড়ালে রাস্তা কাটা, হেঁচকি এসমস্তে আমার কোনো কালেই কিছু আসে যায় না। তবে ওই ধোয়া তুলসী পাতাটি হয়ে উঠতে পারিনি তাই কুসংস্কার বলতে হাতে গুনে দু তিনটে আমারও আছে। এই যেমন ডান চোখ লাফানো বা বিপদে পড়লে হাতের কাছে যে দেবতা কে পায় তাকে ৫১ /১০১ এর পুজো দেব বলে পরিত্রানের একটা পাকা-পোক্ত ব্যবস্থা করে রাখি।এরকমই একটা বিপদের দিনে হুট করে মনে মনে বলেফেলেছিলাম ‘মা গো এযাত্রা রক্ষে করো, আমি না খেয়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে আসবো। ‘ কিকরে জানিনা মা শুনে ফেলেছিলেন এবং কথা মতো রক্ষে ও করেছেন তাই এবার আমার কথা রাখার পালা।
কলকাতায় শীতটা একটু বেশিই পড়েছে, তবুও মনকে শক্ত করে আজ চলেই গেলাম।এলার্ম ছিল ৭.১৫ মিনিটের কিন্তু কিকরে জানিনা ৬.৪৫মিনিটে এলার্ম বাজলো। এমনিতে অফিসের কল্যানে আজকাল ভোরে উঠতে বাধ্য হয়।ওই টাইম ৬.৪৫এ থাকে আমার শেষ এলার্ম টি। ঘুম ভাঙতে ভারী অবাক হলাম, কারণ কাল এলার্ম দিয়েশুুয়েছি একটি এবং সেটি ৭.১৫ তে বাজার কথা কিন্তু ৫মিনিট অন্তর অন্তর বেজে চলেছে প্রায় ৬.৩০ থেকে। যাইহোক লক্ষ করলাম মনটা বেশ ফুরফুর করছে। ঠিক করলাম ওলা কিংবা উবেড় বুক করে চলে যাব। কিন্তু আমার সে গুড়ে বালি,আমার ঘর থেকে মন্দিরের দূরত্ব ২.৭কিমি আর ভাড়া বলছে ২৫০টাকা।চোখ বন্ধ করে ঠিক করলাম আমি বাসেই যাব।গরম জলে স্নান করে ধোয়া জামা কাপড় পরে বাড়ি থেকে যখন বেরোলাম তখন ঘড়িতে ৭.৫৫বাজে। আমার ঘর থেকে প্রথমে টোটো গাড়ি চড়ে যেতে হবে বেলঘড়িয়া ওভারব্রিজ,সেখান থেকে বাস বা ছোট গাড়ি(আমার বাবার ভাষায় ম্যাজিক গাড়ি) এবং তারপর একটি অটো। আগে কখনো একা যায়নি তাই টোটো গাড়ির সহযাত্রী থেকে জেনে নিলাম কোন বাস যায় বা গাড়ি কোথাথেকে পাব। সহৃদয় ভদ্রমহিলা একরকম আমার হাত ধরে বাস এ তুলে দিলেন এবং কন্ডাক্টরকে বলে দিলেন, তিনি যেন আমাকে ডানলপে ঠিক মত পৌছেদেন। সকালে আমি প্রত্যেকদিন বেরোয়। কাজে বেরোয়, কখনো ঘুরতে বেরোয়নি, তাই আজ সকালটা বেশ অন্যরকম। আকাশ মেঘলা, টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে, শীতের সকালে আরিমুড়ি ভেঙে কলকাতা সবে চোখ খুলে বিছানার উপর গুটিসুটি মেরে বসে আছে। ধোঁয়া ওঠা চায়ের দোকানে দোকানি চা এর পাত্র নামিয়ে সবে মাত্র জলখাবারের জোগাড় করতে আরম্ভ করেছে।ফুলের দোকানি দোকান সাজাচ্ছে। ব্যস্ততার সকালের সাথে এর অনেক পার্থক্য। শহরের এমন রূপ কখনো কোন ব্যস্ত সকালে আমি দেখিনি। ৮টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেলাম ডানলপ, এবার এখন থেকে অটো। অটো থামলো নব নির্মিত স্কাই ওয়ে এর দোরগোড়ায়। ফোন বের করে নানা পোজে নিজের ও স্কাই ওয়ের বেশ কয়েকটি ছবি নিলাম এবং রওনা দিলাম গন্তব্যের দিকে।
এবার নিতে হবে পুজোর ফুল মিষ্টি ও ধুপ বাতি। প্রধান মন্দিরের ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে দোকান ঘরের সারি। সেদিকে হাঁটা শুরু করতেই সকলে মিলে দিদি দিদি দিদি করে এমন হট্ট গোল জুড়ে দিলো যে আমি ঠিক করতে পারছিনা কোনটায় যাব। এমনসময় মনেমনে হিসেব করে দেখলাম পুজোর ফুল তাই ডান হাতে নিতে হয় তাই আমি ডান দিকে যাব এবং সেইমত ডান দিকের প্রথম দোকান টিতে ঢুকে গেলাম।
সকাল থেকে না খেয়ে তাই খিদেও পেয়ে গেছে, বেরোনোর রাস্তার ঠিক বাম দিকে রয়েছে খাবারের দোকান । এগিয়ে যেতেই সেই একই ডাক, দিদি দিদি দিদি। আমি চোখ বন্ধ করে বাবার একটি উপদেশ মনে করলাম। যে দোকানে ভিড় বেশি , সেখান থেকে খেও। ব্যস ভিরভাট্টাওলা দোকানটি বেছে নিয়ে বসে পড়লাম একটি টেবিলে। ৫টি পুরী, ছোলার ডাল খাচ্ছি ,পাশের ভদ্রলোক দোকানের ছেলেটিকে ডেকে বললেন একটি রসগোল্লা দেন। ছেলেটি ওনাকে দিলেন এবং সাথে সাথে আমাকেও দিতে চাইলেন। আমি মিষ্টি পছন্দ করিনা, কিন্তু ছেলেটির যুক্তি অনুযায়ী মায়ের ঘরের মিষ্টিকে না করতে নেই তাই আমিও নিলাম, আর সাথে এক ভার চা। বিলের ৪০টাকা মিটিয়ে এবার ঘরে ফেরার পালা।