ওরা আসতো, খেতো, কা কা করতো উড়ে যেতো

তখন সেকেন্ড (2nd) ইয়ার এর পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র দু-সপ্তাহ বাকি। এই শেষ দুটি সপ্তাহ মা সরস্বতী কি পরিমান ভর করেন যে, টুপ টুপ করে এক দুটো বেক লগ নিয়েও সেমিস্টার ক্লিয়ার করে ফেলেছে, এরকম উদাহরণ কিছু কম নেই। যাইহোক শুরু হলো লেখা পড়া, সেকেন্ড ইয়ারে হোস্টেলের যে রুমটিতে আমি থাকতাম, আমার বেড বাদ দিয়ে আরো ৪ টি বেড ছিল, যেগুলো ছিল ফাঁকা। তো আমি স্বাভাবিক ভাবেই রাত জেগে অন্যের ঘরে গেজিয়ে, ঢুলু ঢুলু চোখে ঘরে এসে ধপ করে ঘুমিয়ে পরতাম, আর সেই আমি রাত জেগে দোতলার ঘরে একা জেগে পড়বো, ভেবেই মনোবল হারানোর জোগাড়। ঠিক করলাম, না রাত জাগার মতো দুঃসাহস করা যাবেনা, কারণ মজা করে উড়িয়ে দিলেও হোস্টেল এ যে ভুত আছে এরকম প্রমান অনেক বার মিলেছে।

তো ঠিক করলাম রাতে ম্যাক্সিমাম ১২ঃ৩০ অব্দি তারপর ভোরে উঠবো ৪টে কিংবা ৪ঃ৩০ টেই। সেই মতো এলার্ম দিয়ে শুরু হলো প্রথম রাতের জার্নি। পুরো রাতটা জেগে কাটানো অনেক সোজা এই ভোর বেলায় ওঠার থেকে। কি কষ্টে ঘুম থেকে উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে, গান শুনে, হেটে বেরিয়েও ঘুম ভাঙতে চাইছে না এমন সময় আমি বাদে হোস্টেল এ আরো একটা কিছুর অস্তিত্ত্ব অনুভব করলাম। জানলায় কি ভীষণ টোকা মারার আওয়াজ। আচমকা আওয়াজে আমার ঘুম পগার পর। বহু কষ্টে অনেক সাহস জোগাড় করে ঘরের এক কোনে জানলার পর্দা সরিয়ে দেখি- দুটি কাক, গত রাতের না খেতে পেরে রুটির টুকরো, যেটা আমি ওয়ার্ডেন ম্যাডাম এর ভয়ে ডাস্টবিন এ না ফেলে, খুব সাবধানে পকেট এ ভোরে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম, ও কুচি করে নিঃশব্দে তা জানলা দিয়ে ফেলে নিশ্চিন্ত হয়, তা নিয়ে মারামারি শুরু করেছে।

হটাৎ জনহীন ঘুমেরপুরী তে এই কাক দুটোকে যে কি নিজের মনে হয়েছিলো। তারপর ওরা হলো আমার প্রতিদিনের ভোরের সাথী। আমি ঘুম থেকে উঠেই কিছু শুকনো মুড়ি জানলায় দিতাম। ওরা আসতো, খেতো, কা কা করতো উড়ে যেতো, কি যে মজা হতো। ?

— সুপর্ণা ঘোষ (২৮ জুলাই ২০১৭)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *