ঈশ্বর সৃষ্ট মানুষ প্রধানত তিন প্রকার। নারী পুরুষ ও কিন্নর। আজ বলবো আমাদের বা আমার কাছে মানুষ এর শ্রেণী প্রধানত চার প্রকার ।
- ১)সরকারি চাকুরী রত
- ২)বেসরকারি চাকুরী রত
- ৩)ব্যবসায়িক
- ৪)বেকার
এই চার প্রকার মানুষ ব্যতীত এই মুহূর্তে অন্য কোন শ্রেণী সে ভাবে চোখে পড়েনি আমার। আজ বলব এনাদের সম্বন্ধে। ভালো খারাপ মিসিয়েই মানুষ। মানুষের মধ্যে ভালোটা থাকবে, আর খারাপটা থাকবেনা, এমন হলে তাঁরা ঈশ্বরের চেয়ার টানাটানি করতো। তাই স্রষ্টা সৃষ্টির সময় সকোলের ভালোর মধ্যে ফোটা ফোটা খারাপ কিছু মিশিয়ে আচ্ছা করে ঝাকিয়ে দিয়েছেন।
এবার আসি বিশ্লেষণে, প্রথম এবং অতি মূল্যবান শ্রেণী, সরকারি চাকুরী রত। এনাদের অত্যন্ত পরিশ্রম ও কঠোর মূল্যায়নের মাধ্যমে সরকারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারপর এই শ্রেণী ভুক্ত হতে হয়। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই এনাদের মন কেমন করতে থাকে। কখনও DA কখনও ছুটি, কখনও ইনক্রিমেন্ট নিয়ে এনারা চিত্ত বিচলিত করে থাকেন। তবে এনারা পাত্র এবং পাত্রী হিসেবে অতি মূল্যবান। সে ছেলে বা মেয়ের রূপ যেমনি হোক, তার গুনে(সরকারি চাকুরী) তিনি প্রাপ্ত সম্মানের উচ্চ শিখরে বিদ্যমান থাকেন। চাকরি পাওয়া ও রিটায়ারমেন্ট এর মাঝা মাঝি অর্থাৎ মাঝ বয়সে এনাদের মেজাজ বেশির ভাগ সময় সপ্তমে ও মাধে মাঝে অষ্টম আকাশে চড়ে যায় ঠিক কিন্তু মনের দিক থেকে এনারা ভীষণ সহজ। এনাদের কিছু জন প্রসিদ্ধ উক্তি “এখন লাঞ্চ টাইম”, “পরে আসুন”, ” নতুন ফর্ম নিন”, “এতে হবেনা”, ” যার নামে কাগজ তাকে লাগবে”, “ঘুরে আসুন”, “আজ বড় সাহেব ছুটিতে” ইত্যাদি ইত্যাদি। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ নিশ্চিন্ত এই শ্রেণী ভুক্ত মানুষ তাঁদের সন্তানদের ও প্রচন্ড ভাবে এই শ্রেণী তে আসা এবং লাভ ক্ষতি সম্মন্ধে ছোট থেকেই জানাতে থাকেন। একমাত্র এই শ্রেণীর জামাই রাই শশুর দের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হন। আজীবন সরকার তাদের উপর কি কি অত্যাচার করছে এই গল্পের পেছনে চাপা পড়ে যায় এনাদের সুন্দর বাড়ি গাড়ি ব্যাংক বেলেন্স এর কাহিনী।
এবার আসি দ্বিতীয় শ্রেণীর গল্পে। বেসরকারি চাকুরেদের মনের অবস্থা কবি তার কবিতায় বর্ণনা করে গেছেন। “নদীর এ কুল কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস”। বর্তমান কর্মস্থল নিয়ে সর্বক্ষণ অসন্তুষ্ট এই প্রাণীদের অসন্তোষ প্রকাশ এর সময় টুকুও ভগবান (boss) কেড়ে নিতে দ্বিধা বোধ করেননি। নয় ঘন্ঠা অফিস ও যাওয়া আসা নিয়ে মোট এগারো থেকে বারো ঘন্টা অর্থাৎ দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে খালি ঘুমোতে বাড়ি ফেরেন। সপ্তাহে দুদিন ছুটি, কারো কারো একদিন, কিন্তু সে ছুটি যে তিনি পাবেন এমন কোন কথা দেওয়া যাচ্ছেনা। বছরের পর বছর সন্তানরা এই শ্রেণী ভুক্ত বাবাদের না দেখতে পেয়ে হটাৎ দেখলে পাশের বাড়ির কাকু ভেবে ভুল করলেও তাকে দোষ দেওয়া যায়না। অসংখ্য সমস্যা থাকলেও এনাদের জীবন কাটানোর পক্রিয়া ভারী সুন্দর। ঝা চকচকে ফ্লাট, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স, ফরেন টুর সব মিলিয়ে বিশেষ রকম ঈর্ষার দাবি রাখে।
ব্যবসায়িক বা self employed. এবার বলবো তাদের কথা, যাদের মোটামুটি সকল শ্রেণীই হিংসের নজরে দেখে। এর অবশ্য কারণ ও রয়েছে। ব্যবসায়িক আবার দুই প্রকার-
১) বংশ পরম্পরায় ব্যবসায়ী
২)স্টার্ট আপ ব্যবসায়ী
বংশ পরম্পরায় ব্যবসায়িক বৃন্দ প্রায়ই মুখে সোনার কিংবা প্লাটিনামের চামচ নিয়ে জন্মান। এনারা ছোট থেকে বড় বড় গাড়ি চড়ে স্কুল যান। ঝাঁ চকচকে কলেজ থেকে MBA ডিগ্রি নিয়ে কখনো কখনো শখের চাকরি করেন, আর তারপর পিতৃপুরুষের গরম করে রাখা নামীদামী ব্যবসার নরম গদিতে অধিষ্ঠিত হন। সারাটি জীবন দু হাতে আয় ও ব্যায় করে চিন্তা ভাবনা হীন জীবন অতিবাহিত করেন এবং এই একই রুটিন ফলো করে তাদের পরের জেনারেশন। বিবাহের জন্য এ অতি মূল্যবান শ্রেণী। চোখ ঝলসানো সুন্দরী বউ নিয়ে এদের মাঝে মাঝে বিদেশ যেতেও দেখা যায়।
স্টার্টআপ ব্যবসায়ী- বেশ কয়েক বছর সরকারি চাকরির জন্য পড়ে ও পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত, ব্যর্থ, আশাহত যুবক সম্প্রদায় এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এনারা নিজের কপাল বা ভাগ্যর উপর ভীষণ রকম চোটে থাকেন। ভগবানের উপর বিশ্বাস এক রকম শিকেই তুলে, সরকার ও সরকারী চাকুরী রতদের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে, বাবা কাকা বা লোনের থেকে মোটামুটি একটি পুঁজি সংগ্রহের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। টলমল পা ও এক বুক ধুকপুক নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বিবাহের জন্য এই শ্রেণী সাধারণ মানের। মেয়ের বাবা সরকাররী ও বেসরকারী চাকুরীরত ছেলেদের থেকে আশাহত হলে এই শ্রেণীই তাদের ভরসা। বছরে ১০ লাখ টাকার ইনকাম থাকলেও এরা D-Group সরকারি চাকররা যতটা সম্মান পায়, এরা ততটাও পায় না।
এবার আসি অন্তিম শ্রেণী অর্থাৎ বেকার দের কথায়। এই শ্রেণীর প্রাণীদের ভাগ্য আটকে থাকে একটি মাত্র মিরাকেলের উপর। মিরাকেলটি হলেই এর উপরে বর্ণিত শ্রেণীর যে কোন একটা মধ্যে ঢুকে পড়বেন। আমাদের দেশে এই শ্রেণীর হার সবথেকে বেশি। এনাদের মাথার পেছনে রয়েছে অসংখ্য ডিগ্রি, সাথে দূর্ধর্ষ রেজাল্ট কিন্তু মুখ ম্লান, মনে ভয় ও দুশ্চিন্তা। চাকরির চিন্তা, বাবা মার চিন্তা, প্রেমিকার চিন্তা, ভবিষ্যতের চিন্তায় জর্জরিত এই শ্রেণী প্রত্যহ যুদ্ধ করে চলেছে ভাগ্যের সাথে। বাবা মা, প্রতিবেশী, আত্মীয়র চোখে বলি হলেও এরা প্রানচ্ছল, সবুজ চারার মত। খালি ঠিক জায়গায় সময় মত পোঁতার অপেক্ষা।