আমি কিশোর মনের আকূল অনুভূতিসম্পন্ন এমন বই আগে কখনও পড়িনি। কিশোর উপন্যাসে জাফর ইকবালকে আরও একবার স্বার্থত ঔপন্যাসিক বলতে বাধ্য হয়েছি “আমি তপু” পড়ে। পুরো উপন্যাসটাই তপুময়। নামটি খুব সাধারণ হলেও শতভাগ স্বার্থক হয়েছে নামকরণ। ভালো নাম আরিফুল ইসলাম। ডাক নাম তপু। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তপুর নামের পাশ থেকে মেধাবী উপাধিটা উঠে যায়। তপু ছিল এমন এক মেধাবী ছেলে, যে প্রতি পরীক্ষায় চোখ বন্ধ করে ফার্স্ট হয়ে যেত। শুধু তাই নয়… যে সেকেন্ড হতো, সে তপুর ধারে কাছেও থাকত না!! একটি দুর্ঘটনার পর, সেই ফার্স্ট বয়ের পাশ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেল। স্কুলের স্যার ম্যাডাম এবং বন্ধু-বান্ধবেরা মনে করতে লাগল তপু হয়ত বখে গেছে! তবে প্রকৃত সত্য তপু ব্যতীত আর কেউ জানতো না। তপুর বাবা মারা যাওয়ার পর, তপুর মা’র মস্তিষ্ক বিকৃতি হয় এবং তিনি এজন্য তপুকে দায়ী করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তপুর জীবন দুর্ভিষহ করে তোলেন।
তপু তাঁর পরিবার এবং ভাইবোন থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। তাঁর স্থান হয় রান্না ঘরের পাশের স্টোর রুমে!! তপুর বন্ধু বা আপনজন বলতে কেউ রইল না! তার বন্ধু বলতে রইল শুধু স্টোর রুমের ইঁদুর!! তখন তাঁর জীবনে প্রীয়াংকা আসে বন্ধু হয়ে। সে তপুর একাকীত্ব বুঝতে পারে। গণিতে তপুর প্রতিভা এবং আগ্রহ বুঝতে পারে। তপুকে উৎসাহিত করে। তখন ইঁদুরের সাথে তপুর বন্ধু হিসেবে যোগ দেয় প্রীয়াংকা এবং গণিত। শেষে তপুর জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে গণিত অলিম্পিয়াড! তারপর থেকে শুধুই ‘আরিফুল ইসলাম তপুর’ সাফল্য। এই গল্পটি লেখক শেষ করেন, অত্যন্ত মর্মকাতরভাবে! এই উপন্যাসে জাফর ইকবাল স্যার দেখিয়েছেন, অ্যাডভেঞ্চার ছাড়াও কিশোর উপন্যাস লেখা যায়। আর সেটি এই মাত্রায় সফল হতে পারে! নিঃসন্দেহে ‘আমি তপু’ বাংলা সাহিত্যর অন্যতম সেরা বই। আর আমার পড়া শ্রেষ্ঠ কিশোর উপন্যাস।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: উপন্যাসটির প্রশংসার ভাষা আমার জানা নেই। কিশোর সাহিত্য মানেই খালি মজা,অ্যাডভেঞ্চার বা খুনসুটি হবে এটি সেই ধারণা মুছে ফেলার মত বই।দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদে মতো এটিও একটি মাস্টারপিস কিশোর উপন্যাস। বইটি পড়ে তপুর জন্য আমার মনের কোণে কোথায় যেন একটা ব্যথা অনুভব করি। একটা ছেলের জীবনে হুট করেই এমন অস্বাভিকতা মেনে নেওয়া কষ্টকর। পুরো বইটিতেই একটি ঘোর লাগা অনুভূতি কাজ করেছে। উপন্যাসটিতো কৌশলে লেখক মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি তুলে এনেছে। যা বেশ ভালো লেগেছে।
বই : আমি তপু
লেখক : মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৭
মুদ্রিত মূল্য :১৫০ টাকা।