দোলনচাঁপা দাশগুপ্তের লেখা “ঝুকুমুকু” উপন্যাস টি পড়ার পর থেকে বেশ একটা মিষ্টি কিন্তু মন কেমন করা আবেশে রয়েছি।গল্পটি বড্ড বেশি আপন লাগার পেছনে হয়তো কারন গল্পে বর্ণিত পোষ্য একটি বেড়াল ছানা “ঝুকু”।
গল্পের প্লট অত্যন্ত সাধারণ। আপনার আমার মত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার। বাবা মা দিদি(মিমি) দাদা(রোরো) কে নিয়ে দোদোর অর্থাৎ দীপান্বিতার ছোট্ট সংসার আর তার থেকেও ছোট তাদের দু কামরার ফ্লাট বাড়ি টি।মিমি পড়ে ডাক্তারি, রোরোর ধ্যানজ্ঞান ক্রিকেট এবং দোদো ভালোবাসে নাচতে।গল্পের শুরুতে জানতে পারি দোদোর দিদা ভীষণই অসুস্থ এবং শেষ অব্দি তিনি গত হন। ঠিক দিদার মৃত্যুর দিন দোদো পায় ঝুকু কে। ঝুকু হল তার আদরের পোষ্য। গল্পের আর একটি অন্যতম চরিত্র মুকু। মুকু একটি ৬বছরের মিষ্টি এবং বুদ্ধিমান মেয়ে যে শুরু থেকে শেষ অব্দি নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখে চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষকে। প্রত্যেকটি চরিত্রের নাম করণে লেখিকা বিশেষ মিষ্টতা অবলম্বন করেছেন।
গল্পটি পড়তে পড়তে আমি বারবার ফিরে গেছি আমার ফেলে আসা ছেলে বেলায়। রান্না ঘর থেকে মা এর চিৎকার, ভাই বোনের সাথে খুনসুটি, কে মশারি টাঙাবে তাই নিয়ে হুল্লোড়, কানমোলা, স্কুলের দিন, রবীন্দ্রজয়ন্তীর রিহার্সাল, ডিনার টেবিলে জমিয়ে আড্ডা, আর সব থেকে বেশি মনে পড়লো আমার পোষ্য টিকে। পোষ্যের মৃত্যু হলে পুরো পৃথিবী ফাঁকা হয়ে যায় একনিমেষে। ঠিক তেমনি হলো দোদোর পরিবারের সাথে। দিদির ডাক্তারি পরীক্ষার সাফল্য, দাদার বাংলার হয়ে আন্ডার নাইনটিন টোয়েন্টি টোয়েন্টি প্রথম ম্যাচ, দোদোর জীবনের শ্রেষ্ঠ সন্ধ্যা, সব ছাপিয়ে গেল ঝুকুর আকস্মিক মৃত্যু।
অসাধারণ রচনা কৌশলে লেখিকা পাঠকের চোখের কোনে জল এনে বুঝিয়ে দিলেন সেই অনুভূতি, যখন মানুষ অতিরিক্ত খুশি ও দুঃখের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। গল্পে পাবেন ছেলে বেলায় ফেলে আসা ভাই বোন এর ভীষণ সুন্দর একটা সম্পর্ক যেখানে খুনসুটি, ঝগড়া, বোঝাপড়া, ভালোবাসা বারবার আপনাকে মুগ্ধ করবে। সব শেষে খুব মূল্যবান একটি বার্তা পেলাম- কিছু সম্পর্কের কোন মূল্য হয়না।ওদের আটকে রাখতে হয়না, ওরা থেকে যায়।
গল্প সূত্র: আনন্দমেলা পুজো বার্ষিকী ১৪২৫
মূল্য-১৫০
পৃষ্ঠা-৪২০